ইমিউনিটি বাড়াতে ও বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচতে আমের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে হিমালয়ের আশপাশের সমতলভূমিতে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় একটি ফল আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা শুধু স্বাদ আর গন্ধেই নয়, প্রচুর পুষ্টিগুণেও ভরা। কাঁচা হোক অথবা পাকা যে ভাবেই খাওয়া হোক তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর এই ফলের রাজাটি  হলো আম ।

সারা বিশ্বে প্রায় এক হাজারেরও বেশী প্রজাতির আম রয়েছে, আর মালদার আম সারা বিশ্ব খ্যাতি লাভ করেছে । আমের নানান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট  আছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম । আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনোইডস উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে। আম শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় ও শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। তাই করোনার ক্রান্তিকালে সবাইকে বেশি বেশি আম খাওয়া উচিত।

বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন আমের কিছু উপকারিতা-

১. কাঁচা আম ক্যারোটিন ও ভিটামিনএ সমৃদ্ধ, যা দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে এবং শুষ্ক চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে ও রাত কানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং চোখ ভালো রাখে।  প্রতিদিন এককাপ আম খেতে পারেন তাহলে আমাদের শরীরে ২৫% ভিটামিন চাহিদা পূরণ করে।

২. আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। যা শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায় ও সচল রাখতে সাহায্য করে ।  শরীরকে সতেজ রাখে ও দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৩. আম সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ  কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, কাঁচা আমে ভিটামিনসি এর পরিমাণ  অনেক বেশি।  যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ সাহায্য করে।  তাছাড়াও আছে ফাইবার যা রক্তে উপস্থিত খারাপ সিরাম কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৪. আমে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই , পটাশিয়াম এবং সেলেনিয়াম উপাদান থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে ও হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখে ।

৫. আমের মধ্যে প্রচুর পরিমানে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, যেমন, স্তনক্যান্সার, লিউকেমিয়া, কোলনক্যান্সার, প্রোস্টেটক্যান্সার ইত্যাদি। এতে প্রয়োজনীয় এনজাইমও পাওয়া যায়।

৬. খনিজ পদার্থ আয়রনের ও সোডিয়ামের ভালো উৎস আম। যা আমাদের শরীরের দাঁত, নখ, চুল, মজবুত করার জন্য একটি  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৭. আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম যা শরীরের প্রোটিনের অণু গুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয় রোধ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে সাহায্য করে ।

৮. আমে রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ও টারটারিক অ্যাসিড যা শরীরে ক্ষার ধরে রাখতে সাহায্য করে । এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে । লিভারের সমস্যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য খেতে পারেন কাঁচা আম ।

৯. কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে ফলে রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর হয়, আবার শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে ও দেহে নতুন রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে । আম ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার করে। ব্রণ এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন যা মুখের ও নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড দূর করতে অনেকটা সাহায্য করে।

১০. আমে থাকা প্রচুর পরিমানে ফাইবার , পেকটিন , ভিটামিন সি রক্তে থাকা  ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের  লেভেলের মাত্রা কমায়।

১১.  আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই থাকে যা পুরুষের যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর ফিট রাখে। সন্তানসম্ভবা নারী এবং মেনোপোজ হওয়া নারীর আয়রনের ঘাটতি পূরণে আম বেশ উপকারী।

১২. আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনোইডস উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে।  যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।

সাবধানতা :

আমের উপকারিতা অপরিসীম কিন্তু কাঁচা আম থেকে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। তাই পরামর্শ যে কাঁচা আম খেলে যাদের অ্যালার্জি হয় তাদের কাঁচা আম না খাওয়ায় উচিত। বেশী পরিমাণে কাঁচা আম খেলে পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে ও ওজনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমে অতিরিক্ত পরিমানে সুগার থাকে, ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই  আম খাওয়ায় উচিত। তাছাড়া বাজারের ফরমালিনযুক্ত আমের উপকারিতা থেকে অপকারিতাই বেশি। তাই এই বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করবেন ।